রেজাউর রহমান শাহিন, লালমোহন (ভোলা):
চলছে তীব্র তাবদাহ। এরমধ্যেই সামান্য কিছুটা বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির হওয়ার কারণে গরমের প্রভাব আরো বাড়ছে। গরমের প্রভাবে ভোলার লালমোহন উপজেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৭ জন। এর মধ্যে শিশু, কিশোর, মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই শতাধিক রোগী। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বাড়ায় মেঝেতেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেক রোগীকে। একদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের অভাব অন্যদিকে ডায়রিয়ার রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নার্সগণ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সুপার ভাইজার তাছলিমা বেগম জানান, হাসপাতালে ডাক্তার নেই, আমরা নার্সরাই আন্তরিকতার সহিত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বেডে যায়গা না থাকায় ফ্লোরে, এমন কি হাটার যায়গায় বিছানা পেতে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
বদরপুর ইউনিয়ন থেকে আসা ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু সন্তান নাফিজা নিয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন রিনা বেগম। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে আমার ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। প্রথম কয়েকদিন বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করিয়েছি। ওই চিকিৎসায় ছেলের শারীরিক কোনো উন্নতি না হওয়ায় আজ শুক্রবার তাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়েছি। এখন তার চিকিৎসা চলছে।
উপজেলার ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের গাইমারা এলাকা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ মো. মালেক। তিনি বলেন, ৪দিন আগে সকালে ডায়রিয়া শুরু হয়। এরপর লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ভর্তি হয়েছি। এখান থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া বদরপুরের রাব্বি (১০), ফরাগগঞ্জের হুজাইফা (৫), কালমার আসাদ আলী (৪৫), কিশোরগঞ্জের সেলিম (৫০) ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের অভিভাবকগণ জানান, হাসপাতালে ডাক্তার নেই। নার্সরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। আমরা বেডে যায়গা না পেয়ে রোগী নিয়ে ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছি। রোগী সামান্য ভালো হলেই নাম কেটে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান জানান, ডায়রিয়া হলো পানি বাহিত রোগ। প্রতি বছরই গরম এপ্রিল মাসে গরমের কারণে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার বাড়ে। এর মূল কারণ পানির সমস্য। মানুষজন বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করণে এই রোগ হয়ে থাকে। লালমোহনের প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের একমাত্র চিকিৎসার ভরষাস্থল লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ লালমোহনে ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছেন। যেখানে রয়েছেন শিশু থেকে বয়স্করাও। এছাড়া প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, লালমেহান হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে ৩০টি। এর মধ্যে আছে ৬জন। মেডিকেল অফিসার ২জন। এরমধ্যে একজনের স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাই তিনি ছুটিতে রয়েছেন। বর্তমানে মেডিকেল অফিসার রয়েছেন ১জন। আছে ২জন কনসালটেন্ট, আরএমও ১জন এবং ইউএইচএফপিও ১জন। নার্সের পদ রয়েছে ৩৬ টি, আছেন ১৪ জন। ডাক্তার ও নার্স কম থাকলেও আমরা আন্তরিকতার সহিত রোগীদের সর্বোচ্ছ সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
শিরোনাম:
লালমোহনে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ! চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসা ব্যাহত
-
ভোলা প্রতিদিন ডেস্ক
- আপডেট: ০৪:১৯:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
- ১৫
সর্বাধিক পঠিত