রেজাউর রহমান শাহিন, লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি:
ভোলার লালমোহন উপজেলায় বিভিন্ন স্কুল থেকে সৌর প্যানেলের ব্যাটারি চুরির অভিযোগে একটি আন্তঃজেলা চোর চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন অটোচালক মো. জাকির হোসেন, মো. কামাল এবং ভাঙারি দোকানদার মো. মিজানুর রহমান। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, চুরি করা ব্যাটারিগুলো ঢাকায় বিক্রি করা হতো।
ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ, কুরিয়ারে ব্যাটারি
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই চক্রটির মূল কার্যক্রম পরিচালিত হয় ঢাকা থেকে। তারা ঢাকার কোনাপাড়া এলাকায় বসে বিভিন্ন জেলার স্থানীয় চোরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। চুরির দিন চক্রের সদস্যরা নির্দিষ্ট জেলায় গিয়ে স্থানীয় চোরদের সহযোগিতায় অটোরিকশায় করে বিভিন্ন স্কুল টার্গেট করে। এরপর রাতের অন্ধকারে তালা ভেঙে ব্যাটারি চুরি করে স্থানীয় চোরদের মাধ্যমে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠাতো। সেখানেই চোরাই ব্যাটারিগুলো বিক্রি করা হতো।
দুই স্কুলের ২৪টি ব্যাটারি চুরি
সম্প্রতি লালমোহন উপজেলার গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তারাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সোলার প্যানেলের মোট ২৪টি ব্যাটারি চুরি হয়। এর মধ্যে গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে তারাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১২টি ব্যাটারি চুরি হয়, যার আনুমানিক মূল্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন লালমোহন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
যেভাবে ধরা পড়ল চোরেরা
মামলার পর লালমোহন থানা পুলিশের একটি বিশেষ দল তদন্ত শুরু করে। দলটি স্থানীয় অটোচালক জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। জাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় অপর আসামি কামাল তাকে ফোনে জানায় যে তারা রমাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরি করবে। পুলিশ এই তথ্যের ভিত্তিতে জাকিরকে নিয়ে রমাগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে কামালকে গ্রেপ্তার করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, পুলিশ মিজানুর রহমান নামে এক ভাঙারি দোকানদারকেও গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে জানায়, কামাল এবং সেলিম নামে তাদের আরেক সহযোগী ঢাকা থেকে ভোলায় আসে। তারা স্থানীয় অটোচালক জাকিরের সহায়তায় দিনের বেলায় স্কুলগুলো রেকি করে। রাতের বেলায় তারা তালা ভাঙার সরঞ্জাম ও প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করে। ১২ সেপ্টেম্বর রাতে তারা তারাগঞ্জ স্কুলের তালা ভেঙে ব্যাটারিগুলো চুরি করে। পরে জাকিরের অটোরিকশায় করে ব্যাটারিগুলো মিজানুরের দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। মিজানুর চোরাই ব্যাটারিগুলো ‘সওদাগর এক্সপ্রেস কুরিয়ার সার্ভিস’-এর মাধ্যমে ঢাকায় পাঠায়।
লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি যে ঢাকার কোনাপাড়া থেকে একটি আন্তঃজেলা চোর চক্র এসে স্থানীয় চোরদের সহযোগিতায় বিভিন্ন স্কুলের ব্যাটারি চুরি করছে। আমরা প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে চক্রের মূল হোতাদের শনাক্ত করতে সক্ষম হই। এ পর্যন্ত আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি এবং তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার চক্রের সদস্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এই চক্রের মূল উদ্দেশ্য সোলার ব্যাটারি চুরি করে ঢাকায় বিক্রি করা। আমরা এই চক্রটিকে পুরোপুরি নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর।’
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।